আমি তপু" এটি একটি কিশোর উপন্যাস
আমি তপু" এটি একটি কিশোর উপন্যাস। এমন আকুল অনুভূতি সম্পন্ন কিশোর উপন্যাস আর দ্বিতীয় আরেকটি পড়া হয়নি। কিশোর উপন্যাসে জাফর ইকবাল (স্যারকে) বরাবরই স্বার্থক উপন্যাসিক বলতে বাধ্য হয়েছি 'আমি তপু' পড়ে।
এটি মূলত এক সঙ্গিবিহীন কিশোরের দুঃসহ জীবনের গল্প। অন্ধকার জীবন থেকে এক কিশোরের স্বপ্নের গল্প।
এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আরিফুল ইসলাম তপু। ডাক নামের মতো তার জীবনটাও খুব বেশি বড় নয়। সবে মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে। কিন্তু এই ছোট বয়সে সে মুখোমুখি হয়েছে বহু তিক্ততার। তপু যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন এক ভয়ানক সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা মারা যায়। অল্পের জন্য সে বেচে যায়। স্বামী হারানোর শোকে তপুর মা তপুকে ভুল বুঝে এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। কারণে -অকারণে তপুকে অত্যাচার করে। ছেলেটা মায়ের কাছ থেকে পেতে থাকে ক্রমাগত অনাদর, উপেক্ষা ও ঘৃণা। পরিবার থেকে দূরে থাকায় অবনতি হতে থাকে দূর্দান্ত মেধাবী ছেলেটির। মাত্র তিন বছরের তপুর নামের পাশ থেকে উঠে যায় মেধাবী শব্দটি। যে ছেলে একসময় চোখ বন্ধ করে ক্লাসে ফাস্ট হতো আজ তার যায়গা ক্লাসের শেষ ব্যাঞ্চে।
নিঃসঙ্গ কিশোরের এই দুঃসহ জীবনে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় অপরিচিত প্রিয়াঙ্কা। তার স্পর্শে তপু ফিরে পায় বাঁচার আনন্দ, নতুন উৎসাহে সে আবিষ্কার করে হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য, লুকিয়ে থাকা স্বপ্নগুলো।
উপন্যাসে আরও বর্ণনা করা হয়েছে তপুর আবেগের উঠা - নামা ও জীবনের বাঁকগুলো। কোনো বন্ধু, আত্মীয়স্বজন নেই থেকেও। এমনকি তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটার দাগ, নোংরা কাপড়। তপুর সঙ্গী হলো কাজের লোক দুলি খালা ও মিচকি ইঁদুর। তপুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়া অপরিচিত প্রিয়াঙ্কা (চঞ্চল,উদার) হলো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। উপন্যাসের এক পর্যায়ে প্রিয়াঙ্কা তপুকে বলে, "আমি তোর মা হব, তোর ভাই হব, তোর বোন, বন্ধু সবই হব - দেখিস তুই, খোদার কসম।" তার অনুপ্রেরণাতেই হোঁচট খাওয়া তপু করে স্বপ্ন জয়।
প্রিয়াঙ্কার উৎসাহ এবং নিজের অসাধারন মেধার জোরে ম্যাথ অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ান হয় তপু। গনিতবিদদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয় তার মেধা নিয়ে। তবুও তার মা তার প্রতি একটুও দয়া দেখায়নি।
মূলত,
"আমি তপু" উপন্যাস এক কিশোরের বেঁচে থাকার ইতিহাস, নিষ্ঠুরতার ইতিহাস এবং ভালোবাসার ইতিহাস।
©সাইফুল ইসলাম সাইফুল্লাহ্
#ইচ্ছাপত্র💓💓
No comments