মেজর সিনহা VS প্রদীপ কুমার দাস (পরিকল্পিত হত্যা নাকি মাদক ব্যাবসায়ী)
মেজর সিনহা VS প্রদীপ কুমার দাস
(পরিকল্পিত হত্যা নাকি মাদক ব্যাবসায়ী)
---------------------------------------------------মেজর সিনহা -
২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া মেজর সিনহা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর একজন সিকিউরিটি ফোর্স এর সদস্য। অবসর নিয়ে তিনি ইউটিউব চ্যানেল "জাস্ট গো" খোলেন যার ভিডিও করতে চার/পাচ সদস্যের একটি টিম যায় ভিডিও শুটিং করতে। একটা রিসোর্ট ও তারা ভাড়া করেন হিমছড়িতে দু মাসের জন্য। ঘটনার দিন মেজর সিনহার সাথে আরেকজন ছিল সিফাত নামের। তারা শুটিং এর জন্য পাহাড়ে উঠেন এবং শ্যুটিং শেষ করেন রাত ৮/৯ টার দিকে৷ স্থানীয় রা ডাকাত বলে চেচেমেচি করলে তারা নেমে এসে প্রাইভেট কারে উঠে রি সোর্টের দিকে রওনা হয় সেখানে আগে থাকতে পুলিশ অবস্থান করে এবং মেজর সিনহাকে গাড়ি থেকে নামার পরে গুলি করে।
এখন আসি ঘটনা বিশ্লেষণে এবং কিছু প্রশ্নে -
১.মেজর সিনহা প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটি ফোর্স থাকা সত্ত্বেও সে কেন স্বেচ্ছায় অবসর নিলেন? সে কি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছে নাকি তাকে জোর করে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছিল?
২.মেজর সিনহা ভিডিও শ্যুটিং এর সময় স্থানীয় লোকজন ডাকাত বলে পুলিশ কে কিভাবে অভিযোগ করে যেখানে মেজর সিনহার হত্যার সময় পরনে আর্মির পোশাক পরিধান করা ছিল। তাহলে কি ওই অঞ্চলে আর্মির পোশাকে ডাকাতরা ঘুরে বেড়ায়?
৩.মেজর সিনহাকে চেক পোস্টে বিজিবিরা আটকালে সে তার পরিচয় দিয়ে সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়,কিন্তু পুলিশের চেকপোস্টে তার পরিচয় দিবার পরেও তাকে গুলি করা হয়। তাহলে এটা কি আগে থাকতেই পুলিশের পরিকল্পনা করা?
৪.মেজর সিনহা গুলি খাবার পরেও বেচে ছিলেন। যখন স্থানীয় লোকজন সেখানে জড়ো হয় সেখানে একজন গোয়েন্দা বিভাগের সার্জন ভিডিও করতে গেলে পুলিশ তার মোবাইল ও ক্যামেরা কেড়ে নেয়। তাকে ভিডিও করতে দেয়া হয়নি। পুলিশ কেন তাকে ভিডিও করতে দেয় নি?
৫. মেজর সিনহাকে যে স্পটে গুলি করে হয় সে স্পট থেকে কক্সবাজার যে হাসপাতালে নেয়া হয় সেখানে যেতে বড়জোর ১ ঘন্টা লাগে কিন্তু তাকে নিয়ে যেতে ১ঘন্টা ৪৫ মিনিট সময় লেগেছিল। তাহলে এই ৪৫ মিনিট সময় কি পুলিশ ইচ্ছা করে অপচয় করেছিল?
৬.মেজর সিনহা কে হত্যার সময় তার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগানো ছিল বলে ধারণা করে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা। সে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলে তাকে কেন গুলি করা হল? আর ক্রসফায়ার বলেই কেন চালানো হল যেখানে তার ব্যাক্তিগত পিস্তল গাড়ির ভেতরে ছিল। মেজর সিনহার শরীরে জখম ও কাদার চিহ্ন পাওয়া যায়। তাহলে কি এটা পরিকল্পিত হত্যা?
প্রদীপ কুমার দাস ঃ-
বিএনপির সময়ে রেফারেন্স ধরে চাকরি নেয়া প্রদীপ কুমার দাস আওয়ামিলীগ এর সময়ে মুখোশ পাল্টে হয়ে যান আওয়ামীলীগ। বিভিন্ন জায়গায় চলতে থাকে তার তান্ডব। টেকনাফের ওসি হবার পর থেকে শুরু করে একের পর এক তান্ডব। স্থানীয়রা এই ওসির কর্মকান্ডে ভীত। কেউ কিছু বলতে গেলেই তাকে বানিয়ে দেয়া হয় মাদক চোরাচালান এর ব্যাবসায়ী। বিনা অপরাধে দিয়ে দেয়া হয় ক্রসফায়ার।
স্থানীয়রা জানান তার রাজত্ব নিজ থানা বাদেও অন্যন্য থানাতেও চলে। নিজের নিজস্ব বাহিনী আছে যারা চাদাবাজি করে। তাদের দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রকম পোশাক(পুলিশ, আর্মি)। তারা এসব পরে নানা ধরনের বেপরোয়া কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়।
প্রশ্ন-
১. প্রদীপ কুমার দাস ওসি হিসেবে আলোচিত হবার পরিবর্তে সমালোচিত বেশি। তিনি ইসকন এর সদস্য। স্থানীয়রা জানায়, তাদের এলাকায় রোজা, তারাবী, মসজিদে নামাজ পড়ার সময় তিনি নানারকম বাধা প্রয়োগ করে।
ভারতে যখন মোদি সরকার তিন তালাক এর বিরোধিতা করেন তখন সারাবাংলাদেশ বিপক্ষে বা চুপ থাকলেও টেকনাফ থানার ওসি নিজ দায়িত্বে এলাকায় পোষ্টার, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করেন। তাকে এই দায়িত্ব কে দিয়েছিল?
২.টেকনাফ থানায় ওসি প্রদীপ কুমার দাস যাবার পর থেকেই বেড়ে যায় ক্রসফায়ার এর ঘটনা।বিনা অপরাধে তিনি যে কাউকে ক্রসফায়ার দিতে পারেন আবার মুক্ত করে দিতে পারেন। তার এই ক্রসফায়ারের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল ফরিদুল মোস্তফা নামে এক সাংবাদিক। সেই প্রতিবেদনের জন্য তাকে মাদক ব্যাবসায়ী বলে জেলে নেয়ে হয়। বিস্তারিত কমেন্টে দেয়া আছে।
৩.ওসি যদি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স হয় তাহলে যেখান থেকে ইয়াবা ঢোকে বাংলাদেশে সেই খানে এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও সেই টেকনাফ থেকেই কেন ইয়াবা পাচার হচ্ছে। তাহলে এত ক্রসফায়ার, এত কড়া হবার পরেও কেন থেমে যায়নি পাচার। নাকি সব উল্টো হচ্ছে? যারা পাচার করছে তারা ছাড়া পাচ্ছে কিন্তু যারা বিরোধিতা করছে তারা ক্রসফায়ারের শিকার হচ্ছে?
আমার কল্পনঃ-
আমার যতদুর ধারনা মেজর সিনহা শ্যুটিং করতে এসে এমন কোন একটা গোপন ব্যাপার হয়ত জানতে পারেন যেটা ওসির বিরুদ্ধে যায়। হতে পারে ওসির সাথে কোন মাদকের যোগসাজশ কিংবা আর্মির পোশাকে ওসির চামচাদের ঘুরে বেড়ানো বা মাদকের কোন আস্তানা। অনেকটা সিনেমার মত কাহিনি। ওসি তার তথ্যকে ধামাচাপা দিতে সিনহাকে হত্যা করে মাদকের ব্যাবসায়ী বলে চালিয়ে দেয়।
মাঝে মাঝে জীবন সিনেমার থেকেও নাটকীয়। অনেক কিছুই হতে পারে আবার অনেক কিছু দেখেও বুঝিনা।
(উপরের সকল প্রশ্ন বা অবজারভেশন একান্তই আমার ব্যাক্তিগত মতামত। এর সাথে কোন অমিল হলে বা মিলে গেলে আমি দায়ী।)
No comments